• 28 May 2020

    ফেকুবাবুর কবিতা গুচ্ছ - পর্ব ২

    হরেক রকম কবিতা

    0 155

    ।। আমার দেশ আমার জীবন ।।

    আশিস বসু

    জন্মেছি তোমাতে মাগো রক্তস্নাত হয়ে

    সেই থেকে দুঃখই যাই মাগো সয়ে

    শৈশবে ব্যাথা পাই খেতে মাগো চেয়ে

    একদল ভালো খায় আমি থাকি চেয়ে ।

    সকালেতে উঠে দেখি স্কুলে শিশু যায়

    পরনে দামী পোশাক দামী জুতো পায়

    পোশাকের দিকে মাগো চেয়ে থাকি আমি

    পায়ে মোর নেই জুতো ছিন্ন পোশাকখানি ।

    কোনোমতে খেতে পাই তোমা রোজগারে

    তুমিওত বহুদিন থাক অনাহারে ।

    এখন হয়েছি মাগো আমি তো যুবক

    বুঝতে শিখেছি মাগো কারা বুরবক

    ধর্মের ধোয়া তুলে একদল খায়

    অন্যদল না পেলেই জোরসে চেঁচায় ।

    এভাবে দুদলেই করে দলাদলি

    গরীব মেরেই মাগো দুদলই বলী

    আর মাগো শুনবনা কারুর বারতা

    হক মোর বুঝে নেব এই শেষকথা ।

    --------------------

    ।। চোর ।।

    আশিস বসু

    ক্ষিধের জ্বালায় সে নিয়েছিল রুটি

    দোকানীর হাতে ধরা অশক্ত হাত দুটি

    চোর চোর মার মার বলে যে সকলে

    একজন চেঁচিয়ে বলে থাম সক্কলে ।

    প্রতিদিন চুরি কি যায় জান কি সকলে ?

    শৈশব চুরি যায় প্রতি প্রাতঃকালে ।

    স্বার্থপরতা জন্ম নেয় কৈশোর কালে

    মূল্যবোধ চুরি যায় বেকারত্ব জালে ।

    ওজন আর দাম চুরি চলে যে বাজারে

    মার মার বলেছ কি কোন দোকানীরে ?

    জান তুমি নেতারা যে খায় কাটমানি

    চোর চোর একবারও বলেছ কি তুমি ?

    তোমার পাড়ায় চলে কত অন্যায়

    না দেখার ভান করো, করো অপব্যায় ।

    অসহায় শিশু দেখে রাগে তুমি জ্বলছ

    দিয়েছ একটু রুটি ! ডাস্টবিনে তো ফেলছ ।

    দিয়েছিলে জমিটা তো প্রমোটার হাতে

    প্রমোটার তুলেছে মাথা তুমি ফুটপাতে ।

    আগে দেখ এই দেশে চোর আজ কারা

    বাড়ি তোমার চোরে ভরা ওহে সর্বহারা ।

    ------------------------

    ।। আমি এক সাধারণ মেয়ে ।।

    আশিস বসু

    ( এক মায়ের জীবন কে ফিরে দেখার কাহিনী )

    জন্ম হোল না কোন আমীরের ঘরে

    নিলাম জন্ম অতি সাধারণ স্তরে

    উঠল না কোলাহল কোনও উচ্চস্বরে

    বাজল শঙ্খ শুধু হতাশার সুরে ।

    থাকার মধ্যে ছিল গাত্ররঙ টুকু

    দেখতে মামুলী অতি সাধারণ খুকু

    অভাব আর অনটন নিত্য প্রতিবেশী

    থাকার মধ্যে ছিল ভাইবোন বেশি ।

    সকলের সাথে মোর দিনরাত কাটে

    খেলাধুলা পড়াশুনায় কৈশোর পাটে

    চারপাশে মোর মতো বন্ধু ছিল কয়

    অভাবকে আনন্দ দিয়ে করেছিনু জয় ।

    যৌবনে পা বাড়িয়ে সঙ্গী পেলাম আমি

    ভাই না বন্ধু ছিল জানেন অন্তর্যামী

    তার সাথে হত মোর প্রতিদিন কথা

    তবুতো পারিনি দিতে হৃদয় বারতা ।

    ভ্যালেন্টাইন-ডে কভু ছিলনা আমার

    মা-বাবার চেষ্টা ছিল বিদায় দেবার

    একদিন সময়ের চেনা কালস্রোতে

    বাজল সানাই শুধু বিবাহের রাতে

    হাসিমুখে সকলেরে জানিয়ে বিদায়

    জীবন ভাসিয়ে দেই সংসার ভেলায় ।

    তারপর শুরু হল জীবন প্রবাহ

    আনন্দ বিষাদ মিলে সংসার মোহ

    কেটে গেল কতদিন কত যে বছর

    পুরান সে স্মৃতিগুলো মলিন ধূসর ।

    চাই না দেখতে ফিরে পুরান সেই খাতা

    ভরা সংসার মাঝে আমি আজ মাতা ।

    -----------------------

    ।। প্রতিযোগিতা ।।

    আশিস বসু

    এখন থেকে হচ্ছে শুরু পদ্মা-গঙ্গা জুড়ে

    লিখব সাবাই মনের মতো মগজটা ভর কোরে

    আমি তো তাই বাগিয়ে কলম বসে ছিলুম ছাতে

    কি লিখি ছাই ভেবে না পাই আবছায়া এই রাতে ।।

    গহন মনের গভীর কোনে একটা ছিল আশা

    আমার ভাষা সবার মনে জাগায় প্রত্যাশা

    আমার ভাষার সরল মানে আমজনতার মনে

    বাংলা ঘুরে বিশ্ব জুড়ে দিক দোলা অজপ্রামে ।।

    বৃষ্টি এসে শুধায় আমায় লিখবে আমায় নিয়ে

    রবিঠাকুর লিখে গেছেন তোমায় জীবন দিয়ে

    তোমার কথা আমার ভাষায় কেমন করে লিখি

    বলে গেছেন অনেক কথা সেখান থেকেই শিখি ।।

    সময় এসে বলল আমায়, আমায় নিয়ে লেখ

    আমি বলি ওহে সময় দুর্দশা মোর দেখ

    তোমার পথ চেয়ে আমার জীবন গেল চলে

    আজ এসেছ আমার কাছে হটাৎ পথ ভুলে ।।

    এমন সময় দেখতে পেলুম পাশের বাড়ির ছাতে

    আস্তে আস্তে জানলা খোলে নিকশ কালো রাতে

    চোর বাবাজী পাইপ বেয়ে উঠেছে ওই ছাতে

    না জানি কি করবে চুরি বৃষ্টি ভরা রাতে ।।

    আমার কলম আজ পেয়েছে নতুন দূরদৃষ্টি

    চুরি করেই করবো আমি নতুন নতুন সৃষ্টি ।।

    ---------------------------

    ।। কবি ও কবিতা ।।
    আশিস বসু

    কবিতা অনেকটা চায়ের মতো,কিছু শব্দ,
    কিছু তাল, কিছু রাগ আর কিছু ভাব
    কাপে ফেলে গুলে নাও, দেখবে বানিয়েছ ।


    তারপর ছেড়ে দাও ফেস বুক পেজে, সকলের মাঝে
    আহা উঁহু পাবেই তুমি সকালে বা সাঁঝে।
    কেউ বলবে শব্দের কি অপূর্ব ব্যবহার কবি
    কেউ বা বলবে লেখনীর স্রোত প্রিয় কবি,
    কেউ বলবে বাস্তবের জলন্ত ছবি ।


    আসলে ওটা কি আমি নিজেও জানি না ,
    তাই আমি ধন্যবাদ, আপ্লুত ছাড়া
    কোন কমেন্ট করি না ।


    একদল প্রতি রাতে একটাই লেখে
    সকালেতে ছেড়ে দেয় তিরিশটা পেজে ।
    সন্ধ্যায় ঘরে ফিরে পেজ গুলো দ্যাখে
    লাইক আর কমেন্ট বেশী, আছে কোন পেজে ।


    আবার লিখতে বসে বাগিয়ে কলম
    কবিতা লিখবে সেতো গরম গরম
    কখনও লিখবে কবি ছবিটা দেখে
    আমায় দেখেই যেন সবাই শেখে ।


    ভুলে যাও রবি কবি, ভোল নজরুল
    সুকান্ত মরে গিয়ে করে গেছে ভুল ।
    শক্তি - সুনীল ভোল, ভোল নবনীতা,
    দাপিয়ে বেড়ায় আজ তোমার কবিতা ।


    প্রতিযোগিতা খোলা আছে ফেস বুক পেজে
    তাইতো লড়ছি মোরা সকলের মাঝে ।
    সনদের জন্য মোরা ছুটিয়া বেড়াই
    এ ঘর ও ঘর মাঝে নিজেরে হারাই ।
    তারপর যদি পাই একটা সনদ, কবি আমি হয়ে গেছি
    নেই কো গলদ ।


    হেথা, হোথা, সেথা যাবো কবিদের মাঝে, পড়বো কবিতা
    আমি আঁতেলের সাজে ।
    ফিরিয়া আসিব আমি পুরস্কৃত হয়ে, হাতে বই
    মোমেন্ট শংসাপত্র নিয়ে ।
    বানাতে ইচ্ছে হবে কবিতার বই ,প্রকাশক রেডি আছে
    ছাপাবে সে বই ।


    টাকা তুমি জমা দাও প্রকাশক ঘরে,যত খুশী বই এনো
    বিলনোর তরে ।
    বিলানোর সাথে দিও একখানা সই,
    কবি তুমি হয়ে গেছ মাভৈ মাভৈ ।।


    পরিশেষে তোমাদের বলি কটি কথা,
    ফেস বুক পরে দেই আমার বারতা ।
    তোমার কবিতা যদি ভালবাসে পাঠক
    মুক্ত কণ্ঠে সাধুবাদ দেবে সে চাতক ।


    বরং তুমি থাক দুএকটি পেজে,পাঠক আসবে
    খুঁজে তোমা সেই পেজে ।
    জানিনা কি আছে লাভ থেকে বহু গ্রুপে
    ভাল লেখ আসবে ডাক বহুদূর থেকে ।

    ----------------------

    ।। আমার চোখে মাইকেল মধুসূদন দত্ত ।।

    আশিস বসু

    হে কবিবর, ধরেছি কলম, জানাতে

    প্রণাম তোমা ।ধন্য করেছ বঙ্গভুমি,

    তোমার লেখনীস্পর্শে ।উচ্চ কুলদ্ভব

    পরিবারে জন্ম তব, রাজনারায়ন

    পিতা তোমা, মাতা জাহ্নভী ।উচ্চ ঘরের

    ধনী পুত্র তুমি। শিখিয়াছ ইংরাজি

    শিশুকাল হতে ।মেধাস্পর্শে সংস্কৃত

    হতে বাংলা সনেটের জনক তুমি ।

    লিখিয়াছ কত সনেট কত কবিতা,

    অমিত্রাক্ষর ছন্দে জন্ম দিয়েছ কাব্য

    মেঘনাদ বধ । রাম হতে রাবণেরে

    করেছ মহান ।তোমার লেখনী স্পর্শে

    কৃষ্ণকুমারী, শর্মিষ্ঠা পেয়েছে যে প্রাণ ।

    কিন্ত তুমি এ কি করিলা ?ভারত ভুমি

    ছাড়ি পাড়ি দিলা বিদেশে ।কি পাইলা

    সেথা ? অন্নহীন, ছিন্নবস্ত্র, ভগ্নপ্রাণ

    ক্ষুধার্ত কবি । ভ্রমরূপে সুখস্বপ্ন যে

    টানিল তোমা । একদিন বুঝিলা তুমি

    মম বঙ্গদেশে আছে রতনের চাবি ।

    কণ্ঠে এল “ দাঁড়াও পথিক বর জন্ম

    যদি তব বঙ্গে তিষ্ঠ ক্ষণকাল “।ক্ষীণ

    কণ্ঠে ছিল তোমার শেষ অহংকার ।

    নিজদেশে অবশেষে ভিখারির বেশে

    প্রাণ গেল তব । অস্রুজলে ভাসে সবে

    বঙ্গদেশে তব । আশার ছলনে ভুলি

    বিধির বিধানে ছাড়িলা ভারত-ভূমি,

    শেষ নমস্কারে । ভূতলে গাঁথা মর্মরে,

    আজও প্রনম্য তুমি । হৃদয় মাঝারে ।।



    Asish Basu


Your Rating
blank-star-rating
Sorry ! No Reviews found!