।। যেতে নাহি দিব ।।
আশিস বসু
এসেছে তো সাইক্লোন বারবার লেখার ওপর
তাতে কি থেমেছে কলম করে প্রত্যাহার ।
পুরুলিয়ার জল লিখে দেবী মহাশ্বেতা
প্রবীর গুলি খেল হয়ে অভিনেতা ।
জেলে গেলেন দত্ত উৎপল, করে কল্লোল
দেখেছ কি সেই ছবি ? তোল হিল্লোল !
একটুতে ভেঙে পড় , কবি তুমি কেমন ?
পারনা ভাঙতে প্রথা যখন তখন ।
এককালে আমাদের মহান কবিরা
দিয়েছেন মহামন্ত্র বলেছেন তারা
উন্নত শির নিয়ে লিখে যাও কবি
এঁকে যাও বাস্তবের জলন্ত ছবি ।
----------------------
গানে রাখাল চন্দ্র
আশিস বসু
আমার দেখা রাখাল চন্দ্র, গানের বড়ই ভক্ত
জন্ম থেকেই গায়ে নাকি তার কালোয়াতি রক্ত
ছোট থেকে গাইত খেয়াল শুনতে পেলে ডাকত শেয়াল
এটাই নাকি তার গানের গলার পরমার্থ ।
আস্তে আস্তে বড় হোল বালক রাখাল চন্দ্র
ধীরে ধীরে গলায় এল ভাইপো কৃষ্ণচন্দ্র
গাইত তখন কত যে গান, রাগ ভরা সব মান-অভিমান
পাড়ার লোকে করত খাতির পেত সে সম্মান ।
ধীরে ধীরে বয়স বাড়ে, গানের সাথে বুদ্ধি বাড়ে
ভাবল এবার লিখবে সে গান, করবে সুর-সৃষ্টি
লিখবে সে গান পাগল নিয়ে সরল কথার কৃষ্টি
এসব ভেবে লিখল সে ভাই আজব গানের গল্প
ভেবে না পাই কোনটা ভাল সুর, কথা না কল্প।
আমারও তো বয়স হোল, দেখলাম বহু শিল্পী
শুনলাম কত বাংলা ব্যান্ড আর জীবনমুখী ফুলকি
তাদের সাথে রাখাল চন্দ্র প্রতিযোগিতা কোরে
পৌঁছে যাবে একদিন সে টলিউডের ফ্লোরে ।।
----------------------------
লকডাউন
আশিস বসু
ঘরে ছিল ভাই খাবার মতন কেজি তিনেক চাল
আর ছিল ভাই পটল, আলু সঙ্গে কিছু ডাল ।
এনেছিলাম দশ-খানি ডিম চালিয়ে দেব বলে
ভেবে ছিলাম বেঁচে যাব সাতাশ তারিখ গেলে ।
বিকাল বেলা খবর পেলাম ছোট ভাইয়ের মুখে
আরও চারদিন বেড়ে গেছে থাক তুমি সুখে ।
বলি আমি ওরে ও ভাই বলিস কি তুই ওরে ?
হাতখানি মোর খালি এখন কে দেবে ব্যাগ ভরে ?
বলল আমায় তা জানিনা থাকতে হবে ঘরে
সরকারের কথা শোন নইলে যাবে মরে ।
খবর শুনে ভাইপো এসে দিল যে বারতা
শুনেই খবর ভীষণ পেলাম মর্মে মর্মে ব্যাথা ।
প্রধানমন্ত্রী দিলেন নিদান দেশবাসীর কাছে
চৈত্র যদি ঘরেই থাক দেশটা তবে বাঁচে ।
কি যে করি ভাই ঘরেতে যে টাঁকার টানাটানি
কোথায় পাব খাবার টাকা যদি না যাই আমি ।
টাকা ছাড়া বউ ছেলে মেয়ে বাঁচবে কেমন করে
খিদের জ্বালায় তখন তো ভাই ঘরেই যাব মরে ।
দেশনেতাদের কাছে আমার একটাই প্রার্থনা
ঘরে বসে যেন মেলে খিদের মুখে খানা ।
আজও তো ভাই ঘরেই বসে সঙ্গে লকডাউন
আস্তে আস্তে খুলছে লক হচ্ছে শিথিল কানুন ।
হটাৎ দেখি উম-পুন এল উড়িয়ে আঁচল
ঝড়ের রাতে উড়ে গেল কত যে অঞ্চল ।
গৃহহারা হল আবার মানুষ হাজার হাজার
অন্ন, বস্ত্র, কর্মহীন রসদ কোথায় বাঁচার ?
কে জোটাবে মুখের খাবার ? কে থাকবে পাশে ?
দুর্দিনে ভাই কত যে নেতা মুখোশ পরে আসে ।
সবাই চায় নিজের জন্য করে খাবার রাস্তা
তাই তো ভাই রাজনীতিটাই বাজারে আজ সস্তা ।
------------------------------
হটাৎ বিপদ
আশিস বসু
মানুষ ছিল রসে বসে, সারা বিশ্ব জুড়ে
যখন তখন যেথায় সেথায় বেড়াচ্ছিল ঘুরে ।
ফুর্তি ছিল মনের ভেতর ফুর্তি ছিল পকেটে
তাইত তারা এদিক ওদিক চলত সদাই রকেটে ।
আজ যদি ভাই থাকে হেথায় কাল থাকে সে মেরিকায়
মেরিকা ছেড়ে কিউবা হয়ে ফেরে আবার কানাডায় ।
হটাৎ বিশ্বে কি যে হোল ঘটল ছন্দ পতন
ইউরোপের দেশগুলোতে রোগ হল এক মারণ
প্রতিদিনই হাসপাতালে হাজার হাজার রোগী
শ্বাস কষ্টের যন্ত্রণা টা জানে ভুক্তভোগী ।
রোগীর সাথে ডাক্তার নার্স পাচ্ছে তারাও কষ্ট
এই ভাবেই এক মহামারী দেখা দিল স্পষ্ট ।
শুনছি রে ভাই অনেক কথা রোগ না মারণাস্ত্র
তৃতীয় বিশ্বের হা- ঘরে দেশ সবাই সন্ত্রস্ত ।
না আছে কোন পরিকাঠামো না আছে কোন অর্থ
তাই তো রেখেছি সকলেই মোরা ঘরে থাকার শর্ত ।
এই ভাবে যদি ঠেকাতে পারি মহামারীর আগুন
একুশ কেন দু - মাস ধরে চলুক লকডাউন ।
শুনছি নাকি সারা বিশ্বেই চলছে লক ডাউন
খুলবে যখন লক তখন পৃথিবী হবে ডাউন ।
------------------------------
।। চিকিৎসা ।।
আশিস বসু
অমিয় চরণ ঘাঁটি
করেছিলো হাঁটা - হাঁটি
কোনও এক পূর্ণিমা রাত্রে ।।
অনভ্যাসের প্রকাশে
অভ্যাসের পরবাসে
চন - চনে ব্যাথা হোল গাত্রে ।।
কবিরাজ চোঙদার
নিলো তার দেহভার
জড়ি - বুটি গুলে দিলো পাত্রে ।।
হেসে বলে টিকাদার
হোমিও - র কারবার
বিশদিন লেগে যাবে সারতে ।।
বলি আমি কথা শোন
মোর কাছে ডোজ কেন
তিন-ডোজ নেব বযাথা মারতে ।।
অমিয়র কথা ভুলে
কবিরাজ - হোমিও মিলে
কাদা ছোঁড়ে দুজনের গাত্রে ।।
এখন সুখেতে আছে
করোনা না ধরে পাছে
ঘর ছেড়ে শুয়ে আছে গাছে ।
--------------------------
ঠোঁট কাটা
আশিস বসু
এই দেখ মনিটর, কি বোর্ড হাতে তে
এই দেখ ভরা সব প্রাঞ্জল লেখাতে
ভাল কথা যেই পাই, কপি পেস্ট করি তায়
কবিদের কটা গ্যাং ? পাঠকেরা কি কি খায় ?
ঘরে ঘরে লেখা দিয়ে, করো কেন ছটফট
তেল দিয়ে কেন ধরো লেখনীর হট পট
দেখে শুনে পড়ে শিখে বসে মাথা ঘামিয়ে
বানাবো তোমাকে আমি আগামীর কবি হে ।
হাত করে টনটন, মাথা করে ঝনঝন
ওরে খেঁদি ছুটে আয়, নিয়ে আয় সারিডন
পেজে দেখে মনে মোর লেগে গেল খটকা
পূরানো দিনের লেখা চুরি করে পোটকা ।
কাকে বলে লবিবাজী কাকে বলে চোরামী
বলবে কি তোমরা তো ফেস বুক করোনি ।
(সর্গত শ্রধেয় শ্রী সুকুমার রায় দ্বারা অনুপ্রাণিত )