সারাবাড়িময় উৎসবের মেজাজ। লোকজন সমাগম। ঘরে ঢুকে প্রণবেশবাবুর হাসিভরা মুখখানা দেখে অর্ণবের মনের বিরক্তি নিমেষে ধুয়েমুছে সাফ, তবুও অনুযোগ করল,
-'তুমি জানো দাদাভাই, ছুটি নিয়ে এতদূর আসা কষ্টের, দুর্গাপূজোর সময় এলে অনেকের সাথে অন্ততপক্ষে দেখা হত।'
- 'বসো,...
দেখার চাইতে পাওয়াটা কি কম জরুরি?'(মিটমিটি হাসলেন)
-'কি পাওয়া?'
- 'মনের মানুষ...ভেবেছিস বুড়ো বলে মনের খবর রাখিনা...'
-(লাজুক হাসল) 'ধুর...কি যে বল...'
-'ঠিকই বলি, রথের দড়িখানা একটু জোরে টানলেই দেখবি অ্যামিলিয়া ক্যালিফর্নিয়া থেকে সোজা সরকার বাড়ির অন্দরমহলে।'
- (হতাশকন্ঠে) 'মানবে না, সবাই অরাজী।'
-'আলবাত মানবে।
(প্রণবেশবাবু বলে চললেন)
নব্বই বছরেরও আগে শশীভূষণ চাটুজ্যের সুন্দরী মেয়ে পূর্ণিমার প্রেমে পড়েছিল ধীরাজ সরকার। কিশোরমনে তখন প্রেমের জোয়ার। সন্তানের মুখ চেয়ে চাটুজ্যেবাড়িতে বিয়ের প্রস্তাব পাঠিয়েছিল তারা। জুটল প্রত্যাখ্যান। মুখুজ্যেবাড়িতে মেয়ের উপর অত্যাচারের কথা শুনে সমাজকে উপেক্ষা করে ফিরিয়ে আনেন মেয়েকে। অর্থবান আর অর্থের ক্ষমতা চিরকালই অনস্বীকার্য। নীচুজাতে মেয়ে দেবেন না কিন্তু নিয়তি! ভাই তারাকান্ত রথযাত্রার দিনেই চারহাত এক করায়। পরবর্তীতে ধীরাজের হাতে এবাড়ির রথযাত্রা আরম্ভ।
গোঁড়া শশীমোহন ভালোবাসাকে আটকাতে পারেনি, একবিংশ শতাব্দীতে দু'ভাইয়ের হিন্দুত্বের গোঁড়ামি ভালোবাসা ঠেকাবে? জগন্নাথের জাত নেই, তিনি মানবের মনোরথের অধিষ্ঠাতা। প্রেমের দেবতা।'
-'এতসব বাবা, জেঠুমণি জানেন?'
-'ব্যবসাপত্তর সামলে এতসব জানবার ফুরসৎ কোথায়! তবে জানবে। অ্যামিলিয়াকে আনতে হবে যে।'
-আপ্লুত অর্ণব জড়িয়ে ধরল প্রণবেশবাবুকে। নীচতলায় হৈচৈ, এখনই যে রথ বেরুবে।
সমাপ্ত~