• 17 July 2020

    গল্প

    ওরাও মানুষ

    5 100

    ছেলেগুলো আজও জড়ো হয়েছে তিন রাস্তার মোড়ে। সকাল থেকেই অসহ্য গরম। প্রখর রোদে নাস্তানাবুদ অবস্থা। ওদের সে সবে বিন্দুমাত্র খেয়াল নেই। তিন বেলা এখানে বসে আড্ডা দিতে পারলেই হলো।


    অতসী এ দৃশ্য রোজই দ্যাখে। আর খুব বিরক্ত হয়। তাই রাস্তার পাশের জানালাটা প্রায়শঃ বন্ধ রাখে। ওদের কথাগুলো খুব কানে বাজে।যদিও ওরা কখনো ওকে বিরক্ত করে নি।


    গত পরশু টুবাইকে স্কুলের গাড়িতে তুলে দিয়ে ফিরছিল অতসী। দেখলো, তিন রাস্তার মোড়ে একটা জটলা। ভিড়ের মধ্যে শুনতে পেলো, "একটু হাল্কা করুন, আপনারা দেখছেন না ওঁর শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে"।

    এই বাবলু, "জামার বোতামগুলো খুলে দে, হাওয়া পেলে ওনার ভালো লাগবে।"

    অতসী কৌতুহল নিয়ে একটু দাঁড়িয়ে বাড়ি ফিরে এলো।


    অতসীর ছেলে টুবাই ক্লাস ওয়ানে পড়ে। স্বামী শোভনবাবু অফিসের চিপ এ্যাকাউন্টেন্ট, বৃদ্ধ শাশুড়ি ও ছেলেকে নিয়ে সুখী পরিবার।


    বাড়িতে এসে কেবলই মনে হচ্ছে সেদিনের ঐ ব্যবহারের কথা। শোভনকে রাতে বলেছিল, তখন ওকে বুঝিয়েছিল, "ওদের সাথে ওভাবে কথা নাই বলতে পারতে। পূজোর চাঁদা একশো টাকা বেশি চেয়েছিল। তুমি দিয়ে দিতে।"

    এটাও বলেছিল, "ওরা পাড়ারই ছেলে, কাজ-বাজ পায়নি, তাই আড্ডা দেয়।তাছাড়া কাজের বাজার কতটা খারাপ, তা তো তুমি জানো। তোমার ভাই শুভ্র, বি টেক করে চার বছর বসে আছে। আমিও কোনো সুযোগ করে দিতে পারি নি।


    সেদিন, অতসী টুবাইকে স্কুল বাসে তুলে দিয়ে সবে এসেছে। হঠাৎ শাশুড়ি মার ঘর থেকে একটা তীব্র গোঙানির আওয়াজ শুনতে পেলো। দ্রুত ঘরে এসে দেখলো, শাশুড়িমা বিছানায় শুয়ে কাতর যন্ত্রনায় বলছেন, "বুকে খুব ব্যথা, অসহ্য ব্যথা।"


    অতসী বুঝতে পারছেনা কি করবে এখন। মোবাইল তুলে শোভনকে রিং করলো। কিন্তু বার বার নট রিচেবেল বলছে। অতসী এক দৌড়ে রাস্তায় বেড়িয়ে এলো। তিন রাস্তার মোড় থেকে যখন ছুটছিলো, 'ওরা', মানে 'বখে যাওয়া আড্ডাবাজের দল' (অতসীর দেওয়া নাম) ছুটে এলো অতসীর কাছে, অপু বললো, "কি হয়েছে বৌদি? কোনো সমস্যায় পড়েছেন?" অতসী একটু থেমে কি যেন ভাবলো, তারপর বললো,

    "তোমরা একটা এ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থা করতে পারবে, এখুনি হাসপাতাল যেতে হবে, শাশুড়ি মা খুবই অসুস্থ হয়ে পড়েছেন।"

    অপু বললো, "আপনি বাড়িতে যান। আমরা গাড়ি নিয়ে আসছি।"


    তিনদিন পরে বিকেলে ভিসিটর মিটিংয়ে ডঃ সেন বললেন, আধঘন্টা দেরীতে হলে ওনাকে বাঁচানো যেতো না। একটা ম্যাসিভ হার্ট অ্যাটাক করেছিল।


    ক'দিন পরে শোভন মাকে নিয়ে বাড়িতে এলো। তারপর ওদেরকে নিয়ে মায়ের ঘরে এলো। উনি ওদেরকে দেখে খুব খুশি হলেন। বললেন, "সেদিন তোমরা না থাকলে এ যাত্রা বাঁচতাম না। তোমরা রাতেও পালা করে হাসপাতালে ছিলে, এই নিঃস্বার্থ সেবা আজকাল কেউ করে না।"

    এমন সময় অতসী প্লেটে কিছু মিষ্টি এনে বললো, "এবার এগুলো খেতে খেতে কথা বলো, তোমরা সেদিন না থাকলে........,

    ওর মুখের কথা কেড়ে নিয়ে অপু বললো, "বৌদি এই বখে যাওয়া আড্ডাবাজদের যে কোনো সমস্যায় পাবেন।" তারপর মিষ্টি খেয়ে ওরা চলে গেলো।


    রাতে শোভন অতসী কে বললো, "দ্যাখো কারোর কোনো একটা স্বভাব দেখে তাদের মূল্যায়ন করা ঠিক নয়। সেদিন ঐ আড্ডাবাজরা না থাকলে আজকে মাকে হয়তো ফিরে পেতাম না। ওরা সকলেই এ সময়ের, এ সমাজের শিকার। বেকারত্বের জ্বালা নিয়েই ওরা আড্ডা দিতো। ওদেরও বাবা-মা, ভাই-বোন, বন্ধু, গোটা পরিবার আছে। ওরা কিন্তু সকলকে আপন ভেবে তাদের বিপদে ঝাঁপিয়ে পরে। স্বার্থহীন হয়ে বাড়িয়ে দেয় সাহায্যের হাত। শুধু এ সমাজ ওদের আপনার জন ভাবতে পারেনি। ওদের কে কাছে টেনে নেয়নি। মনে রাখবে 'ওরাও মানুষ'।



    Tarun Indu


Your Rating
blank-star-rating
শংকর হালদার শৈলবালা - (28 July 2020) 5
চমৎকার লেখা ভালো লেগেছে ধন্যবাদ

0 0