গল্প- শিরোনাম--গহন
লেখক-- প্রশান্ত পরাশর
সৈকত ঠেক থেকে উঠে পড়ল । সাড়ে আটটার সময় মধুমিতার কম্পিউটার ক্লাস শেষ হবে, এখন পৌনে নটাবাজে,তাকে দেখা করতে বলেছে,
এতোক্ষনে নিশ্চয় বেরিয়ে পড়েছে রাস্তায় ।কিছুদূর রাস্তা হাটার পর মধুমিতার মুখোমুখি হয়ে পড়ল সৈকত।
সৈকত বলল, একটু দেরী হয়ে গেল ।মধুমিতা বলল , আজতো প্রথম নয়, আর এই শেষ ও নয় । চলো পার্কে দশ মিনিট বসি ।
মাঠে বসেই মধুমিতা জিজ্ঞাসা করল, " তুমি নেশা কর কেন ? কি পাও নেশা করে ?
তোমাকেও তো আমার নেশায় পেয়েছ , তুমি কি পাও? সৈকত বলল ।
সে তুমি বুঝবে না
সৈকত বলল, বুকের ও দুটি কি ?
ধ্যাত , অসভ্য কোথাকার ।
সৈকত বলল, নেশা ছাড়ার জন্যই তো এখান থেকে পালাতে চেয়েছিলাম ।হায়ার সেকেন্ডারি পাস করার পর দুর্গাপুর ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ ভর্তি হলাম হস্টেলে প্রথম রাত্রেই ঘুম থেকে তুলে , দোতালায় নিয়ে গিয়ে মদ্যপ ছেলেদের মধ্যে কেউ একজন জিজ্ঞাসা করেছিল , বুকের ও দুটি কি ?
বলেছিলাম , "ভাওয়াল " ।
অন্য একজন গেঞ্জির ভেতরে দুই হাত ঢুকিয়ে উঁচু করে দেখিয়ে বলেছিল , চুচি জানিস না , চুচি ?
নে নে ধর চোষ ।
অপর একজন বলল , সব জানে শালা ঢেমনা ।
রাত্রি দুটোর সময় একটা টাকা দিয়ে বলেছিল, ' যা বিড়ি কিনে নিয়ে আয় ।
মধুমিতার বলল ,তুমি গিয়েছিলে ?
হ্যাঁ, মেনগেট খুলে আমি বড় রাস্তায় হাঁটছিলাম ।
ইস্ , তোমার যদি কিছু হয়ে যেত ।
তুমি বাঁচতে, তোমাকে কানা গলিতে পথ খুঁজতে হোত না ।
মধুমিতা বলল, " তুমি দাড়ি কাটোনা কেন ?
পয়সা নেই তাই ।
আমি পয়সা দিলে কাটবে ?
সৈকত বলল , তুমি তো আমাকে চুমু খেতে দাও না,
আমার দাড়িথাকা নাথাকায় তোমার কি যায় আসে ?
আবার অসভ্য কথা, মধুমিতা বলল ।
সৈকত বলল, জানো ছোটবেলায় আমি খুব সহজ সরল ও ভীরু ছিলাম । সন্ধ্যার পর রাস্তায় যেখানে যেখানে আলো কম বা অন্ধকার থাকতো আমি ভয়ে চোখ বুজে দিতাম ।
মাএর হাতে ধরাথাকতো আমার হাত । সেই বয়সে এটুকু বুঝতাম যে " মা "আমাকে ঠিক নিরাপদে নিয়ে যাবে ।
তুমি এখনো সহজ সরল আছো সৈকত ।
না মিতা,জীবন অনেক জটিল হয়ে গেছে
চলো উঠি ,বলে মধুমিতা উঠে পড়ল । সৈকতও উঠল কিন্তু ততক্ষণে মধুমিতা দ্রুত পা চালিয়ে এগিয়ে চলেছে ।
পিছনে অনুসরণ করে চলেছে সৈকত ।
পার্ক থেকে বেরিয়ে তে মাথা মোড়ে পৌছে মধুমিতা ডান দিকের পথ ধরল ,
সৈকত হাতনেড়ে বিদায় জানিয়ে সোজা এগিয়ে চলেছে বাড়ির দিকে ,এমন সময় রুনু বোসের সঙ্গে মুখোমুখি দেখা হয়ে গেল। রুনু বোস বলল,চল তোকে আজ নতুন জিনিস টেস্ট করাব ।
সৈকত বলল ,আজ থাক রুনু দা ।
থাকবে কিরে, তুই কি মেয়ে হয়ে গেলি না কি ? সন্ধ্যের আগেই বাড়ি ফিরতে চাস । চল চল বলে, একেবারে হাতধরে সৈকতকে ঠেকে এনে তুলল রুনু বোস। এর পর পকেট থেকে ফেনসিডিল এর বোতল বার করল , জামার পকেট থেকে ভেলিয়াম টেন এর স্ট্রিপ । স্ট্রিপ ছিড়ে দুটো ভেলিয়াম মুখে পুরে নিল ,সিল খুলে ঢক্ ঢক্ করে পঁচাত্তর ভাগ ফেনসিডিল গিলে ফেলল ।
সৈকত এর হাতে দুটো ভেলিয়াম ও বোতলের বাকি অংশটুকু ধরিয়ে দিয়ে বলল ," চেখে দেখ, খাসা জিনিস " ।
কিছুক্ষন পর থেকে স্নায়ু, পেশী,মস্তিষ্ক
অবশ হয়ে আসতে লাগল সৈকতের ।তার দুই চোখ ভেতর দিকে টানছে , হঠাৎ সৈকত এর স্মৃতি তে ভেসে উঠল জাগন্ত আগ্নেয়গিরি ।
তখন সে বারো, তের বছরের বালক,গ্রাম সম্পর্কে এক কাকা এসেছে সৈকতদের বাসায়,তার নাম " সুন্দর "।
অতিরিক্ত খাট না থাকায় সৈকতের সঙ্গে তার রাত্রে শোবার ব্যবস্থা হয়েছে। মাঝরাতে সৈকত টের পায়, প্যন্টের বোতাম খুলে মলদ্বারে লিঙ্গপুরে দেবার মরিয়া চেষ্টা করছে বাবার ঐ খুড়তুতো ভাই । ব্যর্থ হয়ে বা ভয় পেয়ে, সৈকতের হাত দিয়ে স্বীয় উত্থিত লিঙ্গকে চেপে ধরে হস্তমৈথুন করিয়ে নিল ঐ সুন্দর ।
সৈকতের আঙুল বেয়ে নেমে আসছে জ্বলন্ত লাভা ।
আবার স্মৃতিতে ছবি আসছে , ছবি - চিনাকুড়ি কলিয়ারি , ' মা এর ভেড়ার ঘর একটি সোল বছরের ছেলে , ঘরে প্রবেশ করে দেখল , একটা তেল চিটে বিছানায় শুয়ে আছে একটি শিশু ।
বিছানায় পাশে দাঁড়িয়ে আছে শিশুর মা , তার দুইচোখের নিচে কালির পোচ পড়েছে । মহিলার মলিন বেশ , ভীত,সন্ত্রস্ত চেহারা ।
দিদি
এলি ভাই , সব ভালো তো ?
জামাই বাবু কই ?
কাজে গেছে ।
এমন সময় ভেতরের ঘর থেকে বাজখাই গলায় মহিলা কন্ঠ বলে উঠলো, "কে বৌমা " ?
দিদি ফিসফিস করে বলল, আমার শাশুড়ি, প্রনাম কর ।
ভেড়ার মা কে ছেলেটি প্রনাম করল ।সৈকত অস্ফুটে বলে উঠল, ' আঃ ছবি দেখানো বন্ধ কর , বন্ধ ।
প্লিজ তোমরা এখন যাও , আমাকে একা থাকতে দাও , একা ।
প্রায় মাসখানেক পরে সৈকত,মধুমিতার সঙ্গে দেখা করল।
ওরা নির্জনের খোঁজে হাঁটতে হাঁটতে লেকের ধারে এসে বাঁধানো সিড়ির উপর বসল ।
এই এক মাসে মাত্র দুবার ফোনে কথা বলেছো," কি কর কি ? বলে সৈকতের চোখে চোখ রাখল মধুমিতা,
আমি কি সারাদিন ভালোবাসি---- ভালোবাসি বলবো ?
সে তুমি " আই হেট্ ইউ " বললেও আমি বুঝতে পারি- আই লভ্ ইউ ' বলছো ।
সৈকত বলল তুমি আমাকে অশান্ত করে দিয়েছ ।
বাব্বা, আমাকে পাবার জন্য তোমার যে এতো আকুলি বিকুলি কই ," তোমার আচরণে তো তা বুঝি না ? ।
সৈকত বলল, আরে সে পাওয়া নয়, মানসিক বিচলনের কথা বলছি ।
মধুমিতা বলল, একটু বেশি বেশি বলছো কথা দিয়ে দেখা কর না , যে বার দেখা কর আধঘন্টা দাঁড় করিয়ে রেখে তবে বাবুর দেখাকরার সময় হয়, তাও আবার দশ মিনিট না বসতে বসতে ওঠার জন্য উশ্ খুশ কর ।
সৈকত উষ্মা প্রকাশ করে বলল , আমি তোমাকে মুক্তি দিতে চাই, মুক্তি ।
তুমি আমাকে মুক্তি দেবার কে ?
আমি তোমার শেকল কেটে উড়িয়ে দেব নীল আকাশে ।
সৈকত নীরবে চোখ রাখল মধুমিতার দুই চোখে ।
স্মৃতি তে ছবি আসছে , ছবি।
এক বিশাল মহিরুহু বটবৃক্ষ , আকাশ ছোঁয়া যার উচ্চতা, সেই বৃক্ষে অসংখ্য ঝুরি নেমেছে , ঝুরি ধরে দোল খাচ্ছে অনেকে সিন্দুর লেপা মা ষষ্ঠীর থান
শান্ত , শীতল ছায়া ।
ক্লান্ত , বিপর্যস্ত মানুষের আশ্রয় স্থল,
আঃ কি আরাম!
মধুমিতা বলল, কি দেখছ অমন করে ?
সৈকত বলল ,গভীরতা, ব্যাপকতা ।
ডুবিয়ে মারব , বলল মধুমিতা ।
পলকহীন চোখে,ওরা তলিয়ে গেল অতলে ।
# # #