শিরোনাম-পুটু
লেখক-প্রশান্ত পরাশর
অকালে,স্বামীমারা যাবার পর জবা কন্যাশিশু পুটুকে নিয়ে,শিমুলতলি গ্রামে বাপের বাড়িতে আশ্রয় নিল।
রাজনারায়ন চট্টোপাধ্যায় জবার পিতা, গ্রাম সমাজের একজন মাথা মানুষ ছিলেন।
তার ছিল প্রচুর বিষয়আশয়, খ্যাতি প্রতিপত্তি। তিনি নয়টি সন্তানের পিতা
ছিলেন,পাঁচটিকন্যা ও চারটিপুত্র সন্তান।
রাজ নারায়নের সময়কালে পুত্রসন্তান ও কন্যা সন্তানদের একনজরে দেখা হোত না,লালন পালনে ইতর বিশেষ ছিল।তখনকার দিনে শাশুড়ি ও পুত্রবধূ
এক ক্যালেন্ডার বর্ষে,একই কালে বাচ্চা
বিয়তো। রাজ নারায়নের ছোটমেয়ে
বন্দনা ও নাতনি রচনা প্রায় সমবয়স্ক
ছিল।মামাবাড়িতে অনেকগুলো ভাই,
বোনের সঙ্গে পুটু বড়হতে লাগল।ঘরের
মধ্যে ঘর,আপনজনের মধ্যে নিকটজন
নিয়ে স্বপ্ন,আশাপ্রত্তাশা,দ্বায়িত্বও কর্তব্য
বোধ পুষ্টি পেতে লাগল।
আই,সি,ডি,এস এ কর্মি নেওয়াহচ্ছিল,
পুটু একে তাকে ধরে,কাজটা জুটিয়ে নিল।প্রথম প্রথম সে পায়েহেঁটে কাজে যেত,কয়েকমাস পরেই সাইকেল কিনল
সাইকেলে চেপে পুটু সেন্টারে যায়।
মহিলারা তো বটেই,অনেক পুরুষের বুকের গভীরে চাকার দাগ পড়ল।
পরিপাটি পোশাক আশাক,মাথায় ফুলনতেল,বরোলিনমাখা চকচকে মুখে
পুটু সেন্টারে চলল।কাজ যতো ক্ষুদ্রই হোক না কেন,কাজের গর্ব ছিল অসীম।
সত্যনারায়ণ,পুটুর মামা লোকনিন্দার ভয়ে বা বিবেকের তাড়নায়, পুটুরবিয়ের প্রস্তাব নিয়ে দু-দুটোপাত্রের বাড়ির সঙ্গে
যোগাযোগ করেছিলেন, একটি পাত্র এসে পুটুকে দেখে পছন্দও করেছিল, কিন্তু পুটু ও জবার মনেধরেনি পাত্রটি।
জবা, সত্যনারায়ণের সম্মুখে এসে ইতঃস্তত করে বলল,"দাদা পুটি'বলছে টাঁক মাথা।
সত্যনারায়ণের ধৈর্যচুত্যি ঘটল,বলল--
চুল নিয়ে কি ধুয়ে খাবি?
বনেদি ঘর,চার হাল চাষের জমি, আঙিনায় মরাইবাঁধা আছে,গোয়ালভর্তি
গরু, ছাগল,আর কি চাই?
সত্যনারায়ণ এইকথাগুলো একটু গলাছেড়েই বলেছিলেন যাতেকরে পুটুর
কান পর্যন্ত পৌছায়।
জবা চুপসেগিয়ে চলেগেলেও, পুটু মাকে
সামনেপেয়ে ফুঁসেউঠে বলেছিল,নিজের
মেয়েদের বেলায় কাঁচাকাত্তিক বর, আর
আমার বেলায় যতোসব আগড়া, মথরা,
নাই করবো বিহা।
কারো মাথায় চুল কম,কারো বা গায়ের রঙ ময়লা এইখুঁত ধরে পুটু পাত্র বাতিল
করে দেয়, সত্যনারায়ণ মনে মনে বিরক্ত হন।
কিছুদিন গেলে, বিরক্তি মরে এলে, নতুন
উদ্যমে সত্যনারায়ণ পাত্রের সন্ধ্যানে লেগেপড়েন,এইভাবেই একদিন পাত্রের
সন্ধান নিয়ে এলেন,কয়েকদিন পর পাত্র
নিজে এসে পুটুকে দেখেও গেল।
পুটু অপছন্দের কথা সোচ্চারে না জানা নয় সবাই হাঁপছেড়ে বাঁচলো।
পাকাকথা হওয়ার দিন ছেলের বাবা এলেন,কথাবার্তা চলাকালীন পুটু অন্তরাল থেকে বেরিয়ে এসে সরাসরি ছেলের বাবাকে বলল,"শুনুন,বিয়ের
পর আমার বিধবা মা একা হয়ে যাবে।মাকে ছেড়েযাওয়া আমার পক্ষে সম্ভব নয়। আপনার ছেলেকে ঘরজামাই থাকতে হবে,রাজি থাকেন তো বলুন?
এরপর যা হওয়ার তাই হল,বিয়ে ভেঙ্গে
গেল।
সত্যনারায়ণ ক্রোধে অপমানে ফেটে পড়লেন,বললেন--তুই বড় বাচাল হয়েছিস, দুপয়সা রোজগার করে সাপের
পাঁচ'পা দেখেছিস, অসভ্যতামির একটা সীমা থাকা দরকার।
পুটু ঝংকারদিয়ে বলে উঠল, আমার মায়ের কে করবে, তোমরা করবে?
কে করল এতোদিন ? এইটুকু থেকে তুই একদিনেই মাতব্বর হয়েগেলি,এখন তোর মুখে বুলি ফুটেছে,তাই ধরাকে সরা জ্ঞানে নিজের পায়ে কুড়াল মারছিস, আর তোদের ব্যপারে আমি নেই বলে--
সত্যনারায়ণ স্থান ত্যাগ করলেন।
পুটুর মামিমা'বিমলা, পুটু ও জবার পাত্র
পছন্দ না হওয়াকে সাতকাহন করে প্রচার করে, আসলে প্রমাণকরার চেষ্টাহয় যে, তাদের দিকথেকে চেষ্টার কোন ত্রুটিনেই, কিন্তু নিন্দুকেরা ছাড়বে কেন,তারা বিমলার আড়ালে বলে---
খুঁজতে ছিল গুড়গুড়ি, পেয়েগেল--- ঠেলাগাড়ি।
রাজনারায়ণের ভেস্টহওয়া জমিতে জবা
পাট্টা'পেল, সেখানে তৈরীহল তার নিজস্ব
ঘর। মূল পৈতৃক ভিটেছেড়ে পুটুকে নিয়ে
সেখানে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরুকরল জবা।
সময় বয়ে যায়,পুটু সেন্টারে যায়।
ছাপাশাড়িটি কোমরের কাছে গুঁজে নেয় যাতে সাইকেলে, না ফেঁসে যায়।
শাড়ির তলার থেকে লাল টুকটুকে সায়া উঁকি মারে আকাশে।
শাড়িতে নয়,প্রেমেফেঁসে আছাড় খেল পুটু,সেই ঘা এখনো শুকোয়নি তার।
এইগ্রামের ছেলে হৃদয়ের সঙ্গে প্রণয় হল পুটুর।গ্রামের যাত্রাদলের নায়ক সে,
লেখক, হৃদয়ের জন্যে সুন্দর,সুন্দর সংলাপ লেখেন,
সে প্রচুর হাততালি পায়, বাহবা কুড়ায়।
বিয়ের মিথ্যাপ্রতিশ্রুতি দিয়ে হৃদয়,
যৌনসম্ভোগ করে পুটুকে ,একাধিকবার।
পুটুরসিঁথিতে সিন্দুর,হাতে নোয়াশাঁখা কল্পনারচোখে কেমন দেখায়, দর্পণে দেখেনেয় বার বার।
জবা হাঁপানির রুগি, পরিশ্রমে উপরদম ওঠে, তা সত্ত্বেও পুটুর প্ররোচনায় প্রলুব্ধ হয়ে হৃদয়ের বাড়িগেল,বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে ।
অন্নদা'বৌ,হৃদয়ের মা বলল,"জবা আজ
কি মনেকরে "?
জবা কোন ভনিতা নাকরে বলল অন্ন'বৌ
আমার পুটিকে তোমার ঘরের'বৌ করে নাও,ওদের দুটিতে মানাবেও ভালো,
তাছাড়া হৃদয় ও পুটুতে বেশ ভাব ভালোবাসা আছে ।
অন্নদা বলল,দাঁড়াও জবা,ছেলে বড়িতেই
আছে , আমি এক্ষুনি আসছি বলে ভেতরে চলেগেল।
কিছুক্ষন পরে হৃদয়কে সঙ্গেনিয়ে অন্নদা
ফিরেএল, এবং জবার সম্মুখে হৃদয়কে
জিজ্ঞাসা করল, কি রে পুটুর সঙ্গে তোর
ভাব ভালোবাসা আছে?
হৃদয় উত্তর দিল, কে বলল ? যতোসব বাজে কথা,আমার সঙ্গে ওর কোন সম্পর্ক নেই ।
অন্নদা বলল,দেখ জবা আমার ছেলের নামে বদনাম দিলে,আমি কিন্তু ছেড়েকথা বলবো না,জবা মাথানিচু করে
ঘরথেকে বেরিয়েএল।
এই মানসিক আঘাত জবাকে শয্যাশায়ি
করল,একে শরীর দুর্বল তার উপর মনের
জ্বালায় বেঁচেথাকার ইচ্ছেটাই চলেগেল।
অজানা জ্বরে আক্রান্তহয়ে 'জবা' পীড়া
ভোগকরার পর শেষনিশ্বাস ত্যাগ করল।
পুটু মুখাগ্নিকরে মাথামুড়িয়ে শ্রাদ্ধ করল
অন্নদাবৌ বলল,"এই পুটু এই, তুই নাকি
মায়ের শ্রাদ্ধ করছিস্?
পুটু বলল,"হ্যাঁ করছি,আমার মায়ের বেটা নেই, আমিই বেটা।
জবা মারা যাবার পর পুটুর মনে যে শূন্যতা তৈরী হয়েছিল তা পুটুকে মানসিকভাবে বিচলিত করেছিল। এই
মানসিক চাপের বিকৃতিরুপ কিছুদিন পর প্রকাশ পেল।
প্রেমে ল্যাং খেয়েই হোক,কিম্বা মামা মামিদের মুখে চুনকালি দেবার তাড়না-
তেই হোক,পুটু গদাধর সহিস এর নামে
সিন্দুর পরে নিল। বাজারথেকে কিনে হাতে পরল নোয়াশাঁখা।
বিয়ে না করেই, একজন বিবাহিতকে স্বামীর স্বীকৃতি।
পুটু যে আই,সি,ডি,এস কেন্দ্রে কাজকরে তার পাশেই প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষক গদাধর সহিস,এইঘটনায় গ্রামে শোরগোল পড়েগেল,পড়ল স্কুলেও ।
স্কুল'কমিটির সেক্রেটারি ধীমান আচার্য
গদাধর বাবুকে জিজ্ঞাসা করলেন, এ কী
শুনছি মশাই?
গদাধর বলল,"শুনুন আজ্ঞে, স্ত্রী পুত্র নিয়ে সংসার করি,বাড়িতে বিবাহযোগ্য
কন্যা আছে,তাছাড়া উনি জাতিতে ব্রাহ্মণ,আমি কি এইরকম অন্যায় কাজ
করতেপারি, ধর্মে সইবে কেন ?
পুটু সিঁথিতে একহাত সিন্দুরলেপে সদর্পে আই,সি,ডি,এসে যাতায়াত করে। পুটুর চোখে,মুখে কোথাও লজ্জা ও সংকোচের গ্লানির লেশমাত্র খুঁজেপাওয়া যায় না।
পুটুর কারনে যারা অপমানিত বোধ করেন,তারা বলেন-বেহায়া, নির্লজ্জ।
পুটুরসঙ্গে যাদের স্বার্থের সম্পর্ক নেই
তারা বলেন," আহা রে,তাও যদি
সত্যিকারের বিয়ে হোত।
এইঘটনার পরিপেক্ষিতে পুটু মাতৃকুল,
পিতৃকুল উভয়ের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ল।
পুটুর নিকানো উঠোনে, এখন আর গোবরের প্রলেপ পড়ে না,পুইমাচা পর্যন্ত আগাছা উঠেছে।
প্রত্যেকদিন বিকেলে বাড়িসংলগ্ন ডোবারদিকে তাকিয়ে পুটু--
আয়--কেড়ে-- কেড়ে-- কেড়ে বলে ডাকদিত,সে ডাক আর শোনা যায় না।
হাঁসখোয়াড় শূন্য,ঘরের দেওয়ালে
বড় বড় গর্ত, ইঁদুরে ফেলেছে মাটি।
ঈশ্বরে সমর্পিত প্রদীপের শিখাটি থাকে নির্বাপিত ।
বিড়ি ধরাবার অছিলায় গ্রামসম্পর্কিত
মামা বা দাদারা উঠোনে এসে দাঁড়ায়,
কেউ কেউ ভয়খাইয়ে অবদমিত যৌন
আকাঙ্ক্ষা পরিতৃপ্ত করেযায়।
রাতের অন্ধকারে কামুকেরা দরজা ঠেলে প্রেতলোক থেকে লঘু স্বরে কথাবলে।
পুটু সকালবেলা নাপিতবৌকে দেখতে
পেয়ে বলল,জানিস্ কাল রাতে আমার
ঘরে চোর এসেছিল।
নাপিতবৌ ভানি বলল,"তোরঘরে আছে
কি , যে চুরি হবে ?
এ, আমি নিজে দেখেছি ঘুলঘুলির ফাঁকদিয়ে, মুখে কাপড়বাঁধা, হাতেটাঙি নিয়ে দাঁড়ায়'থাকতে,আমার উঠানে ।
রাতের পর রাত মানসিক চাপে থাকতে থাকতে,এখন রহস্যময় মানুষেরা বিচরণ করে পুটুর অবচেতনে,দিনের বেলাতেও সে অসংলগ্ন কথাবার্তা বলে, হঠকারী সিদ্ধান্ত নিয়ে পুটু শাঁখা সিন্দুর ধারণ তো
করেছে কিন্তু মানসিকভাবে তা জারণ করতে অক্ষম হয়েছে, পথেঘাটে দোকানে অফিসে পুটু ষড়যন্ত্রকারী ও হত্যাকারী দেখতেপায়, ভীত সন্ত্রস্ত চোখে
পুটু আড়ালে লুকায়।
ইচ্ছে মতো সেন্টারেযায়, আবার কখনো কখনো দিনেরপর দিন লুকিয়েথাকে
গৃহ'কোনে, আপন মনে।
অনেকদিন হোল আই,সি,ডি,এস'এর চাকরি গেছে পুটুর ,পেটেরদ্বায়ে পুটু হাতে টুপা নিয়ে ভিখমাঙে রাস্তায় রাস্তায়।
বামাপদর স্ত্রী মাধুরী,পুটুকে এড়িয়ে চলতে গিয়ে পুটুর চোখে ধরাপড়ে গেল,
পুটু চেঁচিয়ে বলল," এ লো এই, পালাছি
কোথা? আমি তোর সতীন বটি,সতীন।
মাধুরী বলল,সম্পর্কে আমি তোর মামি
হই।
পুটু বলে,দিনে মামি, আর রাতে হামি।
যতোসব বাপ ভাতারির দল।
ছড়াকাটে পুটু, "অড়তল বড়তল
সেই ছুঁড়ির পঁদতল
আজকে বাজার করে ফেরার সময় ভানু
দেখল,পুটু থানার সামনে দাঁড়িয়ে গলা
তুলে পুলিশদের গালাগালি করছে, আমার মরদকে গারদে রেখেছিস কেন?
আমরা দুটা বেটাকে তোরা কেটেছিস,
তো-রা। মুখে কাপড়বাঁধা লোকটাকে
ঢুকা,টাঙিহাতে লোকটাকে ঢুকা, দেখি-
তোরা কত বড় মরদ?
পুটুর রুক্ষ চুল,মলিন বস্ত্র,এককাঁধে ঝুলছে ছেড়া ব্যাগ,আরেক কাঁধে ঝুলছে দড়ির একপ্রান্তে বাঁধা সস্পেন-
অন্যপ্রান্তে বাঁধা কড়াই। পুটু হেলমেটের
মতো মাথায় পরেনিয়েছে ডেকচি।
ভানু মনে মনে ভাবল,এখন বর্ষাকাল,
পুটুর ভাঙাঘরে জলপড়ে নিশ্চয়,
তাই সে গ্রামছেড়ে বেরিয়েএসেছ সদরে।
হাসপাতাল মোড়ে ,রাস্তার ধারে,
পা'ছড়িয়ে বসে পুটু অশ্রাব্য গালি'পাড়ছে
ভিক্ষাপাত্র বাটি, মাটির উপর রাখা আছে।পায়ের ক্ষতস্থানেবাঁধা
নেকড়ার'উপর মাছি ভেন্ ভেন্ করছে।
ভানু একঝলকে যতোটুকু দেখা যায় দেখেনিয়ে অন্যপ্রান্তে মুখ ফিরিয়ে হাঁটারগতি বাড়িয়ে নিল।
স্থানটুকু পেরিয়ে আসতে পেরে ভানু স্বস্তি পেল।কিন্তু সে ব্যথিত হল,
কারন,মহাশ্বেতা মুখোপাধ্যায় ওরফে পুটু যে তার আপন পিসতুতো দিদি।
গ্রামছেড়ে পুটু এখন শহরে ভিক্ষাবৃত্তি
করে, সুর করে কাঁদে,গলা ছেড়ে গালি- পাড়ে,রাতে হাসপাতালের বারান্দায় থাকে এবং দোকানের কর্মচারীদের দ্বারা ধর্ষিত হয়। এই অনুমান ভানুকে
বিচলিত করে, সে নিজেকে ধিক্কার দেয়
চোখেমুখে তার অসহায়তা প্রকাশপায়।
পুটু লাঠিহাতে তেড়েযায় অদৃশ্য শত্রুর
দিকে,মুখে বলে,"কাছে এসেছিস তো-
মরাব,ঠেঙায় মাথাফাটয় দিব,থুঃ থুঃ
তোর ঘরে মা, বোন নাই?
ভানু মনে মনে ভাবে,এইসব কিসের ইঙ্গিত?
এতো তার অনুমানকে সত্যি প্রমাণ করে।
অনেকদিন যাবৎ এ তল্লাটে পুটুর দেখা
পাওয়া গেল না।
মেয়েটা গেল কোথায়?
মরেটরে গেল না তো?
ভানু ভাবল,এইজুনে সে বাহান্নয় পড়ল,
পুটুর তাহলে চুয়ান্ন হয়। মরার জন্য এই
বয়সটা খুববেশী নয়,আবার খুবকমও
নয়,বিশেষত ভাঙাশরীরের পক্ষে।
পরিবারের কেউ আর পুটুরকথা তোলে না,দগদগে 'ঘা' থাক না আবরণে ঢাকা।
সবাই তো, বাইরে পুটুকে-
নিক্ষেপ করতে চেয়েছিল,পুটুর থাকা তো-অনেকের নিজেরমধ্যে না থাকার
কারন হয়ে দাঁড়িয়েছিল। সুতরাং আপদ বিদেয় হয়েছে।
আজকে হঠাৎই বাসস্ট্যান্ডে পুটুকে দেখতে পেল ভানু,প্রায় ছয়মাস পর।
পুটুর পা'দুটি ফুলে ঢোল,খুঁড়িয়েখুঁড়িয়ে
হাঁটছে,মাথার চুল কদমছাঁটে ছাঁটা, ফাটা ব্লাউজ,পরনের শাড়ি নেকড়ায় পরিণত হয়েছে।
পুটুর গলারস্বর বসে গেছে,এখনো সমানে গালাগালি করছে কিন্তু দূরথেকে
কিছু শোনা যাচ্ছে না,গোঙানির মতো
শোনাচ্ছে।
হাঁড়ি,কড়াই, সস্পেনের ভার সে আর সইতে পারছে না, সংসারী হবার প্রবল
বাসনা নিয়ে; সে আজ বাসন বইছে।
অতিরিক্ত উচ্চাকাঙ্ক্ষা পুটুকে টেনে নামিয়েছে পথের কিনারে,
খোলা আকাশ তার ঘর,নর নারায়ণ তার বর, সে যেন এক চলন্তসংসার ।
ভানু,পুটুকে দেখে আর মনেমনে বলে,
পুটু তুই মর, পুটু তুই ম র,
নাহলে আমি মরব, আ--মি,
আমি যে তোর এইঅবস্থা দেখতে পারছি না রে---
* * *