• 23 August 2020

    সাধুর চোরাবৃত্তি (ছোট গল্প)

    লেখক :- শংকর হালদার শৈলবালা ( চরিত্রহীন লম্পট উপন্যাসের লেখক)

    5 145

    সাধুর চোরাবৃত্তি
    লেখক :- শংকর হালদার শৈলবালা
    ছোট গল্প শিক্ষামূলক ।
    শব্দ সংখ্যা :- 683
    রচনা প্রকাশের তারিখ:- 22 আগস্ট 2020
    ----------------------------------------------

    শিষ্য
    :- প্রশ্ন করে গুরুদেব কে শ্রাদ্ধ বাড়িতে কেন খায় না গোসাইগণ ?

    গুরুদেব :- শোনো তবে ধর্মের একটি গল্প।
    এক পরিব্রাজক বৈষ্ণব গোসাই সর্ব ত্যাগী, এক আশ্রমে তিন দিনের বেশি রাত্রিযাপন করেন না।
    সংকল্প করেছেন নবদ্বীপ ধাম থেকে পায়ে হেঁটে বৃন্দাবন ধাম যাবেন । সোজা পথে ট্রেন লাইন হিসাবে 1350 কিলোমিটার দূরে।
    আগেকার দিনে ট্রেনের বা বাসের যাতায়াত ব্যবস্থা ছিল না, যে কোনো তীর্থস্থান যেতে হলে পায়ে হেঁঁটে যেতে হতো।
    সংকল্প অনুসারে হাঁটা শুরু করেন একা একা।
    কয়েকদিন চলার পরে একটি গ্রামের উপর দিয়ে চলার সময় প্রকৃতির নিয়ম অনুসারে সন্ধ্যা নেমে আসে, রাত্রিযাপনের জন্য গ্রামবাসীকে জানাই।
    গ্রামবাসী বলে এই গ্রামের শেষে কয়েক ঘর ব্রাহ্মণ বাড়ি আছে, একজন ব্রাহ্মণ খুবই নিষ্ঠাবান বাড়িতে শ্রীশ্রী রাধাগোবিন্দ মন্দির আছে। নিরামিষ ভোজন করে থাকেন শিব শংকর চক্রবর্তীর বাড়িতে চলে যান।

    একজন গ্রামের বয়স্ক ব্যক্তি সাথে করে বৈষ্ণব কে নিয়ে যায় শিব শংকর চক্রবর্তীর বাড়িতে।

    বাড়ির গৃহকর্ত্রী সন্ধ্যার সময় বৈষ্ণবের দর্শন পেয়ে আনন্দিত মনে বৈষ্ণব বাবাজী কে সম্মানিত সম্ভাষণ করে মন্দিরের বারান্দায় বসতে দেন , গৃহকর্তা বাড়িতে ছিলেন না।

    গৃহকর্ত্রী বলে বাবাজী আপনি কি স্বপাকে ভোজন করেন অর্থাৎ নিজে রান্না করে ভোজন করা।

    বৈষ্ণব বাবাজী বলে স্বপাকে ভোজন করি মা, চাল ডাল দাও একসাথে দিয়ে করবো রান্না ।

    বৈষ্ণব বাবাজী ভোজন সমাপ্ত করে শ্রী শ্রী রাধাগোবিন্দ মন্দিরের বারান্দায় শয়ন করেন।

    খাওয়া-দাওয়া কয়েক ঘন্টা সময় অতিবাহিত হয়ে গিয়েছে কিন্তু চোখে ঘুম আসছে না বৈষ্ণব বাবাজীর, কাম কামনার আগুনে অন্তরে অন্তরে দগ্ধ হচ্ছে।

    বৈষ্ণব বাবাজী বিছানায় শুয়ে শুয়ে ভাবছে।
    শ্রী শ্রী রাধাগোবিন্দের শরীরে অনেক সোনার গয়না আছে।
    যদি এই গয়না চুরি করে নিয়ে যায় অনেক টাকার মালিক হয়ে , আমি ধনী ব্যক্তির এক জন হয়ে যাবে।
    আশ্রম বানিয়ে বসবাস করতে পারবো নিশ্চিত ভাবে, ভিক্ষাবৃত্তি আর করতে হবে না।
    এই বাড়ীর মা বলেছিল কয়েক লাখ টাকার সোনা আছে। বংশগত ভাবে ব্যবহার হয়ে আসছে বহু বছর ধরে।


    মন্দিরে প্রবেশ করে শ্রী শ্রী রাধাগোবিন্দের শরীর থেকে সোনার গয়নাা গুলো এক্ষেত্রে সংগ্রহ করে, একটি কাপড় দিয়ে ভালো করে বেঁধে নিয়ে বাহিরে এসে বাবাজি ঝোলার মধ্যে রেখে হাঁটতে শুরু করে।

    হাঁটতে হাঁটতে ভোর হয়ে গিয়েছে, চারিদিকে পাখিদের কোলাহল শোনা যাচ্ছে ।
    ভীষণভাবে মলমূত্রের চাপ সৃষ্টি হয়েছে, একটি জঙ্গলের ধারে জলাশয় দেখতে পায়।
    মলমূত্র ত্যাগ করার পর বৈষ্ণবের অভ্যাস অনুসারে স্নান করে নেয় জলাশয়ে ।
    স্নান সমাপ্ত করে দেহে তিলকদি ধারণ করে ইষ্ট মন্ত্র জপ করতে থাকে ।
    জপ করতে গিয়ে মন চঞ্চল হয়ে ওঠে, ভাবে আমি হলাম সাধু ব্যক্তি।
    ধন-সম্পদ আমার জন্য নয়, তবে কেন আমি ভগবানের শরীর থেকে সোনার গয়না চুরি করলাম।
    আমি সমাজের চোঁখে সাধু হয়ে চোর হয়ে গেলাম।
    অনেক কিছু ভাবনা করতে করতে, নিজের চিন্তা ধারার মিলাতে না পেরে আসন ছেড়ে উঠে হাঁটতে শুরু করে।

    সোনার গয়নার কাপড়ের পুুটলি হাতে করে, রাত্রি যাপন করেছিল সেই মন্দিরের দিকে চলতে শুরু করে।
    আর মনে মনে ভাবে কেন এমন হলো।


    দিনের আলোয় গ্রামের মানুষেরা সবাই বেরিয়েছে, চারিদিকে বাবাজীকে ধরবে বলে।
    কেউ কেউ হাতে লাঠি নিয়েছে বাবাজিকে চোর প্রমাণিত করে পেটাবে বলে।
    বাবাজী কে গ্রামের ফিরে আসতে দেখে, গ্রামবাসীরা ঘিরে ধরে।
    বাবাজী গয়নার পুঁটুলি দেখিয়ে বলে আগে মন্দিরে চলুন সবাই, ভগবানের গয়না গুলো ফেরত দেয়।
    তারপর আপনাদের বিচারে আমাকে যে সাজা প্রদান করবেন, তাহা মাথা পেতে গ্রহণ করবো ।

    বাবাজীর কথায় সকলেই মন্দিরে আসে,
    বাবাজী গৃহকর্তার হাতের গয়না গুলো দিয়ে বলে ভগবান কে আগে পরিয়ে দিন।

    বাবাজী গৃহকর্ত্রী মা কে ডেকে বলে মা গত রাতে আমাকে যে চাল দিয়েছিলে রান্না করার জন্য, সেই চালের রহস্য কি ?
    কোথা থেকে নিয়ে এসেছিলে চাল ডাল।
    গৃহকর্ত্রী মা বলে আমার স্বামী শ্রাদ্ধ বাড়ি থেকে নিয়ে এসেছিল পুরোহিতের কাজ করে ।

    বাবাজী গৃহকর্তাকে ডেকে জিজ্ঞাসা করে বাবা আপনি যে ব্যক্তির উদ্দেশ্যে শ্রাদ্ধ করেছিলেন, সেই ব্যক্তি জীবিত থাকাকালীন কেমন ব্যক্তি
    ছিলেন।

    গৃহকর্তা বলে উক্ত ব্যক্তি জীবিত থাকাকালীন চুরি কাজ করতো।

    বৈষ্ণব বাবাজী বলেন চোরের শ্রাদ্ধের চাল খেয়ে় আমার মধ্যেও চুরির জন্য বাসনা জেগেছিল এবং চুরি করেছিলাম ধনী ব্যক্তি হবার বাসনায়।

    এইজন্য বৈষ্ণব শাস্ত্র অনুসারে 45 দিন পর্যন্ত মৃত ব্যক্তির বাড়িতে অন্ন ভোজন করা যাবে না কারণ তাহাতে ভক্তি নষ্ট হয়ে যেতে পারে আমার মতো।
    আমি চুরি করেছি অপরাধ করেছি, আপনারা আমার যে সাজা দেবেন আমি তাহা সাজা ভোগ করার জন্য প্রস্তুত আছি ।

    উপস্থিত গ্রামের মানুষেরা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে বলে বাবাজি এক নম্বর খাঁটি
    সাধু বাবা আছে।
    চুরি করার পর কেউ ফেরত দিতে আসে না।

    সাধু বাবা চোর নয়, দ্রব্য ঘটিয়েছে

    জয় সাধু বাবার জয়।
    ••••••••••••••••••••সমাপ্ত•••••••••••••••••••••



    শংকর হালদার শৈলবালা


Your Rating
blank-star-rating
সৌগত মুখোপাধ্যায় - (23 August 2020) 5
অসম্ভব ভালো লাগলো।

1 0

Lata Biswas - (23 August 2020) 5
ভীষণ ভালো লাগলো

1 0

Krishna Ghosh - (23 August 2020) 5
পঁয়তাল্লিশ দিন পর্যন্ত মৃতব্যাক্তির বাড়িতে অন্ন ভোজন করা যাবেনা ۔۔۔এই তথ্য টা আজ জানলাম ۔۔۔۔দারুন লেখা 👌👌👌

1 2