ধর্ষিতার সন্তান অধ্যায় 1
লেখক :- শংকর হালদার শৈলবালা
যাযাবর বেদে সম্প্রদায়ের তথ্যভিত্তিক উপন্যাস।
শব্দ সংখ্যা :- 387
প্রকাশের তারিখ :- 23 আগস্ট 2020
_______________________________________
আমি ধর্ষিতা মায়ের সন্তান, আমার মা যৌবনে হয়েছিল ধর্ষিতা আমার বাবা নামক পুরুষের কাছে থেকে।
মা সামাজিক মর্যাদা লাভ করতে পারেনি কোনোদিন, আমাকে নিয়ে ঘুরেছে দেশ দেশান্তরে।
আমার সামাজিক মর্যাদা দেওয়ার জন্য পিতৃত্ব পরিচয় হিসাবে বাবা নামক ধর্ষকের নাম জুড়ে দিয়েছে আমার মা।
সমাজ ব্যবস্থার হাত থেকে বাঁচতে গিয়ে, আমার গর্ভধারিনী মা বিয়ে না করেই হাতে শাঁখা সিঁথিতে সিঁদুর পড়ে সধবা সেজে থাকে সর্বক্ষণ।
আমার অকল্যাণ হবে ভেবে মা দ্বিতীয় বার কোন পুরুষের সঙ্গ লাভ করেননি।
বড়় হয়ে জানতে পারলাম ঐ ধর্ষক পিতার ঘটনা।
একি যন্ত্রণাদায়ক জ্বালা ছেলে হয়ে তাহা বুঝতে পেরেছি।
মা পরিস্থিতির শিকার হয়েছে মেনে নিতে পারিনা কারণ কোন প্রতিবাদ হয়নি যাযাবর বেদে সম্প্রদায়ের নারী হওয়ার জন্য ।
সমাজ ব্যবস্থা নাকি অনেক খারাপ ছিল, গ্রামের মোড়লদের কথাই শেষ কথা হতো। আইন ব্যবস্থা ছিল অনউন্নত কারণ যাযাবর বেদে সমাজ সেই যুগে কোন দেশের বা এলাকার নাগরিত্ব ছিল না ।
থানা পুলিশ ধনী ও সমাজের প্রভাবশালী ব্যক্তিদের কথাই চলতো।
নানা প্রশ্ন এসে যায় আমার মধ্যে বারবার। কখনো কখনো মায়ের প্রতি আমার ঘৃণা বোধ হয় কারণ সমাজ ব্যবস্থার সাথে লড়াই করে আমার পিতৃত্ব পরিচয় আদায় করতে
পারেননি ।
কিন্তু প্রকাশ্যে প্রকাশ করতে পারিনা কারণ দশ মাস দশ দিন গর্ভে ধারণ করে যন্ত্রণা ভোগ করেছেন পিতার সাহায্য না নিয়ে।
অন্তরে অন্তরে জ্বালা অনুভব করি। ছোটবেলায় মা বলতো তোর পিতা আছে
কিন্তু কোথায় আছে তা জানি না ।
আমি এক ধর্ষকের পাপের ফল, বড় হয়েছি ধীরে ধীরে সকলের লাথি-ঝাটা ও সমাজের অত্যাচারিত হয়ে ।
জীবন ধারণ করে থাকতে লজ্জাবোধ করে, মাঝেমধ্যেই মনে হয় ঐ ধর্ষকের খুন করে ফেললেই ভালো হয়।
আবার ভাবি আমি জেলে চলে গেলে, মায়ের কি হবে কে দেখাশোনা করবে মাকে।
নানান চিন্তা করতে করতে আমি বর্তমান বড় মাতাল।
সমাজব্যবস্থা সবাই আমাকে মাতাল বলে কিন্তু কেন আমি মদ্যপান করি তাহা কেও একবার খোঁজ নিয়ে দেখে না।
আমার বয়স বেশি নয় 16 বছরে পা রেখেছি কিন্তু ছোটবেলা থেকে বিভিন্ন মানুষের লাথি-ঝাটা খেতেখেতে সমাজের বিভিন্ন পরিস্থিতি নিজের নয়নে দেখেছি।
বয়সে ছোট হলেও আমি অনেক পেঁকে গিয়েছি, সমাজ যহা কে বলে ইঁচড়েপাকা।
এতকিছু যন্ত্রণার মাঝেও মায়ের ইচ্ছা পূরণ করার জন্য, লেখাপড়া চালিয়ে যাচ্ছি।
লোকে বলে মাতাল হলেও লেখাপড়ায় আমি নাকি ভীষণ ভালো, স্মরণশক্তি আছে ভীষণভাবে।
বেশি পড়তে হয় না একবার দেখলেই আমার পড়া মুখস্তত হয়ে যায়।
আমার মায়ের নাম আরনা যাযাবর বেদে সম্প্রদায়ের মানুুষ।
আমরা গ্রামগঞ্জে পথে-ঘাটে ঘুরে ঘুরে আনন্দ দান করে থাকি সভ্য সমাজের মানুষদের। আনন্দ দান করার বিনিময় যে অর্থপ্রাপ্তি ঘটে, তাহা দিয়ে আমাদের জীবন জীবিকা নির্বাহ করতে হয়।
••••• ধর্ষিতার সন্তান প্রথম অধ্যায় সমাপ্ত•••••
ধারাবাহিকভাবে প্রতিদিন প্রকাশিত হচ্ছে, পরবর্তী পর্বগুলো পড়ুন।