ধর্ষিতার সন্তান অধ্যায় 2
লেখক :- শংকর হালদার শৈলবালা
যাযাবর বেদে সম্প্রদায়ের তথ্যভিত্তিক ধারাবাহিক উপন্যাস।
লেখা প্রকাশের তারিখ :- 23 আগস্ট 2020
শব্দ সংখ্যা :- 420
________________________________________
আমি ধর্ষিতা আন্না যাযাবর যৌবনের প্রারম্ভে থেকে কুড়িটি বসন্ত করেছি নিঃসঙ্গ জীবন। যৌবনে এসেছে পুরুষের সঙ্গ বিচ্ছিন্নভাবে, জীবন জীবিকা নির্বাহ কর্মের সূত্র ধরে।
আমাদের আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষদের নির্দিষ্ট কোনো ঘরবাড়ি নাই, সারা বছর বিভিন্ন স্থানে নৌকায় করে ঘুরে বেড়ায় কয়েকটি দলবদ্ধ হয়ে।
জীবন-জীবিকার তাগিদে চলতি সমাজের মানুষদের কাছে যেতে হয় নাচ গান ইত্যাদি করে আমাদের আয় করতে হয়।পথই আমাদের জীবন ঘরবাড়ি বাসস্থান।
দেখা হয়ে যাবে হয়তো কোন গ্রামগঞ্জের কোন নাচের আসরে, সভ্য সমাজের মাঝে চলতি ভাষায় ডাকে বেদের দল বলে।
বেদে সম্প্রদায়ের মধ্যে জাত পাতের লড়াই আছে উঁচু-নিচু মাঝারি।
বেদে যাযাবর সম্প্রদায়ের মানুষেরা দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে সভ্য সমাজের সাথে বসবাস করে।
1/ নৌকায় বসবাস করি আমরা সংস্কৃতিমনা, নাচ গান আমাদের জীবনের অঙ্গ।
প্রতিনিয়ত নিয়ম করে সঙ্গীত চর্চা করে থাকি সবাই মিলিত হয়ে।
পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা হয় সর্বক্ষণ, বিশেষ করে নারীদের শরীরের প্রতি বিশেষ ভাবে যত্ন নেওয়া হয় থাকে।
কারণ সভ্য সমাজের মানুষের সাথে ওঠা বসা করে জীবন জীবিকার জন্য, নাচ গানের মাধ্যমে রোজগার করতে হয় নারী শরীরের অঙ্গভঙ্গি দেখিয়ে।
এছাড়াও পাশাপাশি বয়স্ক মহিলারা বিভিন্ন রকম অসুখ বিসুখের জন্য ঝারপোজ করে, বাত ব্যথার ঔষধ বিক্রি করে তাবিজ কবজ দিয়ে ইত্যাদি ইত্যাদি দিয়ে রোজগার করতে হয়।
নৌকায় বসবাসকারী বেদেরা ভীষণ খাদ্য রসিক হয়ে থাকে, খাদ্যে রুচি বোধ আছে।
অন্য যাযাবরদের মতো যা পায় তাই খাওয়া-দাওয়া করে না।
এদের অনেকগুলো বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করা যায়।
সঙ্গীত প্রিয়, সরল বিশ্বাসী, প্রেমিক মন, ভীষণ রসের রসিক ও খোলামেলা মন সবাইকে অল্পে বিশ্বাস করে থাকে।
একটুু ভালোবাসা পেলেই সবাইকে আপন করে নিয়ে হারিয়ে যেতে চাই সকলের মাঝে ও ধর্ম বিশ্বাস অটুট।
সরল বিশ্বাসী হওয়ার কারণে চলতি সমাজের মানুষেরা সুযোগ নিয়ে প্রতারিত করে থাকে, বিশেষ করে নারীদের সাথে ভালোবাসার অভিনয় করে নারী দেহ সম্ভোগ করার পরে পালিয়ে যায়। লড়াই করতে গেলে সম্পূর্ণ দোষ উক্ত বেদেনীর ঘাড়ে চাপিয়ে দিয়ে নিজে মুক্ত হয়ে বেরিয়ে আসে।
বিচারে বলা হয়ে থাকে বেদে নারীরাই খারাপ চরিত্রহীন।
বেদে সম্প্রদায় হয়ে লড়াই করতে কেউ এগিয়ে আসে না চলতি সমাজের মানুষেরা।
সেই বেদে নারীদের ভালোবাসায় পেয়েছি অমৃতের সন্ধান।
হে বেদে নারী তোমার বুকে মাথা রেখে স্বপ্ন দেখতে চাই সংসারের।
তোমার অন্তর অমৃতের ভান্ডে আছে
যত ভালোবাসা তুমি আমাকেে দেবে।
আমি আন্না ভালোবাসার কড়ি বিকাশিত হওয়ার আগেই হয়েছি, চলতি সমাজের এক যুবকের কাছে ধর্ষিতা।
কি আছে আমার কাছে তোমার দেওয়ার জন্য, বাসি ফুলে হয় না কোন ঠাকুর দেবতার পূজা অর্চনা ।
হে বন্ধু আমার দেহ এখন হয়ে গিয়েছে বাঁশি ফুলের সমান, সমাজ ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছে নর্দমায়।
আমি ভালোবাসার প্রতীক ঐ নর্দমা থেকে তুুুুলে নিলাম, ছুঁড়ে দেওয়া ফুল।
করবো আমি তোমার চলতি সমাজের প্রতিষ্টিত, থাকবে তুমি আমার ভালোবাসার সুরের মাঝে অন্তরে অন্তরে।
••••• •• ধর্ষিতার সন্তান অধ্যায় 2 সমাপ্ত •••••••••
এই উপন্যাসটি ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হচ্ছে প্রতিদিন, পরবর্তী পর্বগুলো করুন।