• 29 October 2020

    নতুন ভোর

    আলোর দিশারী

    0 32

    # গল্প প্রতিযোগিতা

    #বিষয় : নতুন ভোর

    #শিরোনাম: আলোর দিশারী

    #পাপিয়া চক্রবর্তী

    # শব্দ সংখ্যা:৯৮৭


    খবরের কাগজে একটা‌ বিজ্ঞাপন "কতিপয় মহিলা কর্মী চাই"।পরে লেখা ব্যাগ কারখানা তে।মন্দিরা বিজ্ঞাপন টা দেখে ঠিক করে ফেলে তাকে এই চাকরি টি জোগাড় করতেই হবে।কারণ এ ভাবে আর চলছে না।সে স্বামীর কাছে গিয়ে কাগজ টা দেখিয়ে বলে ;কাল আমি এই কারখানা তে যাব।একবার চেষ্টা করে দেখবো যদি চাকরি টা হয়।তুমি আপত্তি কোরোনা।আর তুমি তো বসে নেই। তুমিও চেষ্টা করছো।তোমার কিছু হয়ে গেলে আমি ছেড়ে দেবো।

    কৌশিক বলে লেখাপড়া শিখে তোমায় কারখানায় কাজ করতে হবে?।আমি নিজে বেকার তোমায় না করি কি করে?মন্দিরা বলে;তাতে কি;কোন কাজ ই ছোটো নয়।জীবনের সততা ;এটাই আসল কথা।

    প্রায় দু বছর হয়ে গেলো কৌশিক বেকার।কৌশিক একটি জুটমিলে ম্যানেজার পোস্টে কাজ করতো। কিন্তু হঠাৎ করে বিনা নোটিশে কারখানা টি বন্ধ হয়ে যায়। কিছু দিন আন্দোলন চলে শ্রমিক দের । কিন্তু লাভ হয় না। কারখানা থেকে প্রাপ্ত যেটুকু টাকা পেয়েছিল তার দিয়ে এই দু'বছর চলে।এবার পুঁজি ফুরিয়ে এসেছে।কৌশিক চেষ্টা করে যাচ্ছে কিন্তু হচ্ছে না।চারটি পেট।ওদের ছ'বছরের যমজ সন্তান আছে দেব আর দিয়া ।


    পরের দিন সকল হতেই মন্দিরা রান্নাবান্না করে ছেলে মেয়ের ব্যবস্থা করে সোজা কারখানা য় আসে। গেঁটে দাড়োয়ান এর সঙ্গে কথা বলে সোজা মালিকের ঘরে।মালিক কে বিজ্ঞাপন টি দেখিয়ে চাকরির কথা বলে।মালিক টুকটাক কথা বলেই বুঝতে পারে একে দিয়ে হবে।

    দুদিন পরে তার কাজ শুরু হয়।শুরু হয় তার চাকরি জীবন।প্রত্যেক শনিবার সপ্তাহের পেমেন্ট দেওয়া হয়।আর রবিবার ছুটি। কিন্তু একটা বিষয় খেয়াল করে ছেলেদের থেকে মেয়েদের মজুরি কম কিন্তু কাজ‌একি। বিষয় টা তার ভালো লাগে না।যাইহোক এভাবেই চলছিল। সামান্য হলেও উপকার হচ্ছে সংসারে।আর রোজ এসে কৌশিক কে কাজের গল্প করে আগে যেমন কৌশিক করতো।

    এভাবে চলতে চলতে হঠাৎ একদিন মালিক জানায় আজ সপ্তাহ পেমেন্ট হবে না ম্যানেজার আসেনি। কর্মচারী দের মাথায় হাত ।কাল রবিবার রেশন তুলতে হবে বাজার করতে হবে টাকা না পেলে চলবে কি করে?মন্দিরা‌এবার বলে চলো সবাই মালিকের ঘরে।সবাই মুখ চাওয়া চাওয়ি করে।তারা ভয় পায়। মন্দিরা জোর দেয় এবং বুঝিয়ে বলে নিজেদের প্রাপ্য টাকা; কেউ দয়া করে দিচ্ছে না;কাজের বিনিময়ে পাচ্ছে;তবে এতো ভয় কি।সবাই টিফিনের‌ সময় মালিকের ঘরে যায়।মন্দিরার প্রথম বলে টাকা না হলে তাদের চলবে না।মালিক ভয়ানক রেগে যায় আর পঞ্চাশ টাকা করে কর্মচারী দের জন্য দেয়।মন্দিরা বলে এভাবে টাকা নেবে না।তাদের হিসেবের প্রাপ্য তাদের দিতে হবে।মালিক বলে পেমেন্ট সিট তৈরি হয়নি একাউন্টেট ঘোষ বাবু আজ আসেন নি।

    মন্দিরা আস্তে করে বলে ;স্যার আমায় একবার দেবেন সিট টা।মালিক উত্তেজিত হয়ে বলে তোমার সাহস তো কম নয় বলে তিনটে কাগজের পাতা জুড়ে দেন। মন্দিরা কিছু না বলে পেমেন্ট সিট নিয়ে চলে আসে।এসে বলে আমার কাজ টা কেউ করে দে;আমি এটা দেখি পারি কিনা। দুঘন্টা র চেষ্টা য় রেডি করে মালিক কে দেখায়।শনিবার ই সবাই পেমেন্ট পায়। কিন্তু মন্দিরা বুঝে যায় তার চাকরি আজ ই শেষ।বাড়ি যাবার সময় মালিক তাকে বলে সোমবার কাজে যোগ দেবার আগে তার সঙ্গে দেখা করতে।সব সহকর্মী দের খুব মনখারাপ হয়।

    বাড়ি গিয়ে ও চুপচাপ থাকে। কৌশিক জিজ্ঞেস করে কি হয়েছে? মন্দিরা সব বলে।কৌশিক বলে বেশ করেছো।সোমবার যথা সময়ে অফিসে ঢুকে সহকর্মী দের সঙ্গে দেখা করে মালিকের ঘরে যায়।

    আসবো স্যার।

    হ্যাঁ এসো। সত্যি করে বলতো তুমি কতদূর লেখাপড়া করেছো? মন্দিরা বলে আমি বি এ পাশ।

    তবে এই চাকরি করছো কেন?

    মন্দিরা বলে; প্রয়োজনে।

    তুমি কাল থেকে এই ঘরে বসবে।ঘোষ বাবু ওকে রোজকার একাউন্স একটু বুঝিয়ে দিন।মন্দিরা তো অবাক।আর আপনি সামনে সপ্তাহে থেকে হেড অফিসে বসবেন।ঘোষ বাবুর মুখটা কালো মেঘে ঢেকে যায়।মন্দিরার খারাপ লাগে।

    মন্দিরা এসে সহকর্মী দের বলতেই অনেকেই খুশি হয় আবার দুতিন জন ওকে মালিকের চরিত্র নিয়ে সাবধান করে।

    ‌পরের দিক থেকে তার ডিউটি অফিসে।ঘোষ বাবু তাকে কাজ বুঝিয়ে দেন আর ফাঁক পেলেই একটি কথাই বলেন;মা সাবধানে থাকবে আর মনে জোর রাখবে লোকটি কিন্তু ভালো‌ নয়। মন্দিরা বলে চিন্তা করবেন না।আমার মনে জোর আছে।এরপর ঘরে মালিক আর মন্দিরা। মালিক শুরু করে সে সংসার জীবনে সুখী নন।তার বউ তাকে সুখ দিতে পারেনি।চারখানা বাচ্চা দিয়েছে।কোন সময় দৈহিক ইচ্ছে থাকে না।আমি খুব অসুখী। রোজ ই নানা ভাবে প্ররোচিত করতে থাকে। মন্দিরা সব কথা মন দিয়ে শোনার ভান করে।একদিন বলেই ফেলে সুখ তো স্বামী স্ত্রী র দাম্পত্য র বন্ধনের উপর নির্ভর করে ফলে আপনার ও দায়িত্ব আছে।মালিক খুব অবাক হয়ে যায় এই কথা শুনে।এরপর একদিন মন্দিরা অফিসে ঢুকেই দেখে মালিক হাজির। ঢুকতেই বলে তোমার দেরী হলো কেন আজ?মন্দিরা বলে স্যার আপনার ঘড়ি ফাস্ট আছে।এখনো দুমিনিট বাকি দশটা বাজতে।মালিক দুটো টিকিট ওকে দিয়ে বলে আজ আমি আর তুমি সিনেমা য় যাবো। লাঞ্চ টাও বাইরে করবো তারাতারি কাজ সেরে নাও। মন্দিরা বলে স্যার আজ তো হবে না।আমার বাড়িতে বিশেষ কাজ আছে আমি আধঘন্টা আগে বেড়োবো ভাবছিলাম।মালিক রাগ দুটো ছিঁড়ে বলেন তুমি আমাকে বুঝতে চাইছো না।বুঝলে তোমার ই সুবিধা হোতো। মন্দিরা হালকা কন্ঠে বলে ;আমি তো অতিরিক্ত সুবিধা চাই নি স্যার!আমার ন্যায্য পাওনা টুকু পেলেই আমি খুশি।

    এরপর চলে আসে পুজো। মন্দিরা একদিন বলেই ফেলে বোনাস লিস্ট কিভাবে করবো ?8.33 তো?না না এভাবে বোনাস আমি দেই না।একটা গড় টাকা দিয়ে দেব।এখন নয় পুজোর দুদিন আগে।মন্দিরা বলে;স্যার এতো দেরী করে দিলে ওরা কেনাকাটা করবে কি করে।মালিক বলে তোমাকে ওসব ভাবতে হবে না।তুমি পাবে।চলো আজ একটু ঘুরে আসি।শরীর টা ভালো লাগছে না।তোমাকে নিয়ে আজ মার্কেটিং করে আসি।মন্দিরা বলে অপরাধ নেবেন না আজ আমার ছেলে মেয়ের জন্মদিন।আজ পারবো না।চিন্তা করবেন না আমি আপনাকে নিজে বলবো কবে যাবো।মালিক লাফিয়ে ওঠে।

    ফেরার আগে একবার কারখানা য় যায় গিয়ে বলে আবার আন্দোলনে নামতে হবে নাহলে কিন্তু বোনাস পাবে না।আমি বাসস্ট্যান্ডে আছি তোমরা একে একে এসো আলোচনা করতে হবে। বাসস্ট্যান্ডে সবাই মিলিত হয়। কৌশিকের সঙ্গে আলোচনা করে ইউনিয়ন করা নিয়ে। কৌশিকের সাহায্যে ওরা ইউনিয়ন ফর্ম করে।মালিক কে এবার চাপ দেয় বোনাসের জন্য।মালিক বুঝতে পারে না কে মদত দাতা? মন্দিরাকে পরের দিন জিজ্ঞেস করে বলতো কে ওদের মদতদাতা? মন্দিরা বলে স্যার দিন পাল্টেছে ওরা ওদের মনের জোরে ই এগিয়ে আসছে।মালিক কিছুতেই রাজি না।তখন মন্দিরা বলে স্যার দিয়ে দিন তারপর আমি আর আপনি একদিন আউটিং এ যাবো। প্রয়োজনে রাত টাও কাটিয়ে আসবো কোনো হোটেলে। সত্যি বলছো?

    হ্যাঁ!

    ‌স্যার বোনাস লিষ্ট আমার তৈরি হয়ে গেছে; কাল ই দিয়ে দিন।সবাই ধন্য ধন্য করবে আপনাকে।আর দেখবেন প্রোডাকশন ও বাড়বে।পরেরদিন সকালেই সবাই কে বোনাস দিয়ে দেওয়া হয়।তারপর মন্দিরা বলে স্যার আজই যাবো আমরা ।মালিক উৎফুল্ল হয়ে বলে আজই? হ্যাঁ স্যার।তবে আপনার গাড়ি নিয়ে গেলে সবাই সন্দেহ করবে।আপনি বাসস্ট্যান্ডে গিয়ে ট্যাক্সি ধরুন আমি আসছি।মালিক বেড়িয়ে যেতেই খসখস করে ইস্তফা পত্র লিখে মালিকের টেবিলে রেখে কারখানায় চলে যায়।সবাই কে বলে আর হয়তো দেখা হবে না।তোমরা ভালো থেকো বলে বেড়িয়ে যায়।দুর থেকে দেখে মালিক একজন ট্যাক্সিওয়ালা র সঙ্গে কথা বলছে।সে রাস্তা পার হয়ে বাস এ উঠে পড়ে।বাড়ি এসে কৌশিক কে বলে আমি পেরেছি আর চাকরি টাও ছেড়ে দিয়েছি।কৌশিক জড়িয়ে ধরে বলে আমি জানতাম তুমি পারবে।তোমার এই মনের জোর ই তোমাকে ভবিষ্যতে র পথ দেখাবে।আর এই দেখো আমার এপয়েন্টমেন্ট এর চিঠি।আমি চাকরি পেয়ে গেছি।মন্দিরা সারারাত কেমন জেগে থাকে মনে হয়‌ তাদের জীবনে এলো নতুন ভোর।



    পাপিয়া চক্রবর্তী


Your Rating
blank-star-rating
Sorry ! No Reviews found!